৯৯৯ : শিবচরে ভারতীয় নাগরিক নারী পাচারকারী স্বামী ও স্ত্রী আটক, নারী উদ্ধার

শিব শংকর রবিদাস ও মিশন চক্রবর্ত্তী :
গার্মেন্টসে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে ঢাকার সাভার থেকে এক নারীকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে মাদারীপুরের শিবচরে এনে আটকে রাখে পাচারকারী ভারতীয় নাগরিক স্বামী ও তার স্ত্রী। বিষয়টি বুঝতে পেরে কৌশলে ওই নারী ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করেছে ও পাচারকারী স্বামী ও স্ত্রীকে আটক করেছে।
পুুলিশ ও ভিকটিম সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সাভার পৌরসভার আড়াপাড়া গ্রামের সজল মোল্লার স্ত্রী সোমা আক্তার (১৯) গত ১২ ডিসেম্বর বিকেলে তার অসুস্থ্য বান্ধবী একই পৌরসভার আনারকলি গ্রামের সাথী আক্তার প্রিয়াকে দেখতে তার বাসায় যায় এবং ঐ বাসায় রাত্রী যাপন করে। পরদিন ১৯ ডিসেম্বর সকালে সাথী আক্তার প্রিয়ার বাসায় তার আরেক কথিত বান্ধবী শুভতারা (১৯) ও তার স্বামী মানিক বিশ্বাস (৩২) বেড়াতে আসে। এসময় সাথী আক্তার প্রিয়া তাহার বান্ধবী ভিকটিম সোমা আক্তারের সাথে মানিক বিশ্বাস ও তার স্ত্রী শুভতারার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মানিক ও তার স্ত্রী শুভতারা দুজনেই ঢাকার উত্তরায় গার্মেন্টেসে চাকুরী করে মাসে ৩০/৩৫ হাজার টাকা বেতন পায় বলে তারা সোমাকে জানায়। এসময় সোমার বান্ধবী সাথী আক্তার প্রিয়া সোমাকে বলে তোরতো চাকুরীর প্রয়োজন তাই তুই মানিক ও শুভতারার সাথে যা, ওরা তোকে ৩০/৩৫ হাজার টাকার বেতনে চাকুরী করার সুযোগ করে দিবে। সোমা আক্তার বিষয়টি তাহার স্বামী স্বজল মোল্লার সাথে আলোচনা করে একপর্যায়ে রাজি হয়ে ওই দিনই দুপুরে সাথী আক্তার প্রিয়ার বাসা থেকে মানিক ও তার স্ত্রী শুভতারার সাথে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসা থেকে বের হওয়ার পর মানিক ও শুভতারা সোমাকে নিয়ে উত্তরার পথে না গিয়ে শিমুলীয়া ঘাটের দিকে আসতে থাকে। এসময় সোমা ভিন্নপথে আসার কারন জানতে চাইলে শুভতারা বলে তার দুলাভাই বিদেশে যাবে, তাই তারা আজকে গ্রামের বাড়ি যাবে এবং ২২ ডিসেম্বর দুলা ভাইসহ সবাইএকসাথে ঢাকায় আসবে। এভাবে প্রতারনা করে সোমা আক্তারকে মানিক ও শুভতারা কৌশলে শুভতারার বাবার বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের বড় কেশবপুর গ্রামের শফি ফকিরের বাড়ীতে নিয়ে আসে। এখানে তারা সোমাকে দিনের বেলা চোখে চোখে রাখলেও রাতে ঘরের দরজা তালা মেরে রাখে। এসে সোমার খটকা লাগে। ২২ ডিসেম্বর সকালে মানিক ও তার স্ত্রী শুভতারা সোমাকে ভারতে পাচার করবে বলে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ-আলোচনা করছিল। আড়াল থেকে সোমা তাদের কথা শুনতে পেয়ে কৌশলে জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে শিবচর থানা পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে শিবচর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছে সোমা আক্তারকে উদ্ধার করে ও পাচারকারী চক্রের সদস্য ভারতীয় নাগরিক মানিক বিশ্বাস ও তার স্ত্রী শুভতারাকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মানিক বিশ্বাস ভারতের নাগরিক বলে জানায়। আসামীদের জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত মানিক বিশ্বাস ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ থানার নয়া গোপালগঞ্জ গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে ও তার স্ত্রী শুভতারা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের শফি ফকিরের মেয়ে। মানিক বিশ্বাস প্রতিমাসে ৩-৪ বার অবৈধপথে বাংলাদেশে আসে বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে।
ভিকটিম সোমা আক্তার বলেন, আমি আমার অসুস্থ্য বান্ধবীকে দেখতে গেলে আমার সেই বান্ধবী সাথী আক্তার প্রিয়া আমাকে চাকুরীর প্রলোভন দিয়ে তার বাসায় আসা অপর এক নারী শুভতারা ও তার স্বামী মানিকের সাথে ঢাকার উত্তরার কথা বলে পাঠায়। কিন্তু মানিক ও শুভতারা আমাকে কৌশলে প্রতারনা করে শিবচর শুভতারার বাবার বাড়ি এনে আটকে রাখে। সেখানে মানিককে তার এক সহযোগীর সাথে মোবাইলে আমাকে ভারতে পাচার করার কথা বলতে শুনি। পরে আমি ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। আমি ওদের কঠোর বিচার চাই।
শিবচর থানার অফিসার ইনচাজ মো: মিরাজ হোসেন বলেন, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে ওই নারীকে উদ্ধার করি। এসময় নারী পাচারকারী মানিক বিশ্বাস ও তার স্ত্রী শুভতারাকে আটক করি। মানিক বিশ্বাস ভারতীয় নাগরিক। তার শশুরবাড়ি শিবচর। সে প্রতিমাসে ৩-৪ বার অবৈধপথে বাংলাদেশে আসে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। আসামীদের মাদারীপুর জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।