শিবচরসহ মাদারীপুরে ফেসবুকে ছড়িয়েছে ডাকাতির গুজব

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
মাদারীপুরের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে ডাকাতির হওয়ার আশঙ্কায় গুজব ছড়ানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে মঙ্গলবার রাতে এ গুজব ছড়ানো হয়। এছাড়াও ডাকাতদের আক্রমণ ঠেকাতে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়। এতে বিভিন্ন এলাকায় করায় হাজার হাজার জনগণ রাতের আধারে টর্চ লাইট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তবে পুলিশ বলছে, রাতে ডাকাত পড়ার ঘটনা সম্পূর্ণ গুজব।
জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতে দেশ এখন নিস্তব্ধ। এ সময় এক ধরণের প্রতারণ চক্র আছে যারা সুযোগ সন্ধানে থাকে। সম্প্রতি দেশের একটি জেলায় পিপিই পরিধান করা একদল ডাকাত চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে এমন ঘটনা রয়েছে। তাই আমরা সকলকে সর্তক রাখতে জেলা পুলিশের একটি ফেসবুক পেইজে প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে, গতকাল রাতে জেলায় কোথায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। ফেসবুকসহ যেসব স্থানে এ খবর ছড়ানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ গুজব।’
মসজিদে মসজিদে মাইকিং করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মসজিদে মাইকিং করা এটা একদিকে ভালো একদিকে খারাপ। মাইকিং হলে মানুষ সর্তক হয় অন্যদিকে আতঙ্কগ্রস্থ হয় মানুষ। তাই সকলকে সব দিক থেকে সর্তক থাকতে হবে। কোন ভাবেই গুজবে কান দেওয়া যাবে না।’
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, ডাকাতির এই ঘটনার সূত্রপাত হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ও রাজৈরের টেকেরহাট থেকে। এরপর চারিদিকে মাইকিংয়ে ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। সদরের বাহাদুরপুর, শিরখাড়া দুধখালী, রাজৈরের ইশিবপুর, কবিরাজপুর, টেকেরহাট, এমনকি শিবচর উপজেলার বহেরাতলা, কলাতলা, পাঁচ্চরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানেও এমন মাইকিং হয়েছে।
শিবচরের অনেকেই তাদের ফেসবুকে পোষ্ট করে লেখেন, ‘শিবচরের কলাতলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এলাকাবাসীর ধাওয়া, মসজিদে মাইকিং করে সর্তক।’ এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ডাকাতির গুজব।
সদর উপজেলার কালিরবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল বাপ্পি বলেন, ‘রাতে ডাকাতির খবর শুনে ঘুমাতে পারিনি। সারারাত বাড়ির আশে পাশে পাহাড়া দিয়েছি। সকালে শুনি সব নাকি গুজব ছিল।’
রাজৈর উপজেলার সুজন হোসেন নামে এক কলেজছাত্র বলেন, মসজিদে মসজিদে একাধিকবার মাইকিং হওয়ায় সবার মধ্যে আতঙ্ক আর ভয় সৃষ্টি হয়। আমাদের এলাকার বেশির ভাগ মানুষ রাতে টর্চলাইট নিয়ে রাস্তায়, জমিতে নেমে পড়েছিল।’
এদিকে রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দর থেকে থেকে ৪ জনকে ডাকাত সন্দেহে স্থানীয়রা আটক করে। পরে তাদের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে ওই ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এখন পর্যন্ত তাদের ডাকাতির সংশিষ্টতার কোন বিষয় প্রমাণ না হওয়ার পরেও তাদের থানায় আটকে রাখা হয়।
এ সম্পর্কে রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার শওকত জাহান বলেন, স্থানীয়রা ডাকাত সন্দেহে চার জনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তবে তাদের সাথে কোন ডাকাতির সম্পর্ক নেই। আপাতত তারা থানায় থাকলেও তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা ও ফেসবুকে ডাকাতির বিষয় প্রচার-প্রচারণা সবই গুজব। এ গুজব গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের সীমান্তবর্তী থেকে আসতে শুরু করে। পরে রাজৈর উপজেলাসহ আশে পাশের উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি যেন কোন ভাবে খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে তার জন্য আমরা রাতেই পুলিশের টহল জোরদার করেছি। ফলে ডাকাতির খবর এখন পর্যন্ত কোথাও শোনা যায়নি।’
মসজিদে মসজিদে মাইকিং এর বিষয় জানতে চাইলে ইমাম মোয়াজ্জেম কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম খান বলেন, ‘জেলার এক স্থানে ডাকাতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মসজিদে মাইকিং করা হতে পারে। বিগত দিনে এমন ধারণা থেকে সকলকে সর্তক করতে মাইকিং করা হয়েছে। তবে, জেলায় কোথাও ডাকাতি হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আর একটি মসজিদে মাইকিং হলে তার দেখাদেখি আরো কয়েকটি মসজিদে মাইকিং হয়। এটি চারিপাশে এমনি ছড়িয়ে পড়ে।’