দাখিলে শিবচরে চা দোকানীর মেয়ের গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন, পাশে দাড়ালেন চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী

মো: মনিরুজ্জামান মনির ও কমল রায় :
দারিদ্রতাকে জয় করে শিবচরে দাখিলে উপজেলার মধ্যে সেরা ফলাফল করেছেন চা বিক্রেতার মেয়ে খাদিজা আক্তার। শতভাগ ক্লাশ করে এই বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে খাদিজা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও দরিদ্র পরিবারের সন্তানটি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া নিয়েই সংশয় রয়েছে। তবে দারিদ্রতা তার এই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাড়ালেও নতুন করে আশার আলো জেগে হয়ে উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী পাশে এসে দাড়ানোয়। খাদিজার এই ফলাফলের খবর পেয়ে চীফ হুইপ এই অদম্য মেধাবীর বাড়িতে পাঠিয়েছেন মিষ্টি। নেতৃবৃন্দদের বাড়িতে পাঠিয়ে থাকার ঘর সংস্কারে দিয়েছেন টিন ও নগদ দশ হাজার টাকা। এছাড়াও ভবিষ্যত লেখাপড়ার জন্য জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থাকে বৃত্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরেজমিন জানা যায়, শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দরিদ্র কৃষক মোশারফ শরীফ ও স্ত্রী ফরিদা বেগম পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ঘর-বাড়ি হারিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে মাদবরচরের কাওড়াকান্দি ফেরি ঘাট এলাকায় অন্যের জমি খাজনা নিয়ে ঘর তুলে দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে খাদিজাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ঘাটে চায়ের দোকান করে চলছিল সংসার। পদ্মা সেতুর নদী শাসন বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন শুরু হলে প্রায় ২ বছর আগে আবার বসত ভিটা হারায় মোশারফ। পদ্মা সেতুর বাখরের কান্দি পূন:বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় পায় দরিদ্র পরিবারটি। ভাঙ্গাচুড়া টিনের ঘরেই বসত পরিবারটির। ঘাট কাওড়াকান্দি থেকে কাঁঠালবাড়ি স্থানান্তর হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী স্পীডবোট ঘাটে আবার চায়ের দোকান শুরু করেন। অভাব অনটনের সংসারে দুই ছেলে ও একমাত্র মেয়ে খাদিজাকে ভর্তি করেন কাঁঠালবাড়ি সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায়। এই মাদ্রাসা থেকে খাদিজা ২০১৮ সালের জেএসসি পরীক্ষায় বৃত্তি পায়। তার ভাল ফলাফল নজরকারে মাদ্রাসাটির শিক্ষকদের । তার পরিবারের দারিদ্রতার কথা জেনে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ অন্যান্য শিক্ষকরাও বিভিন্ন বই, খাতা দিয়ে ও বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়ে খাদিজাকে সহযোগিতা করে। ক্লাশে খাদিজার শতভাগ উপস্থিতি ছিল। ফলশ্রুতিতে চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করে খাদিজা। তার ফলাফলে মাদ্রাসার শিক্ষকরা ও পরিবারের সকলেই খুশি। তার স্বপ্ন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পাশ করে সরকারের উচ্চ পদস্থ কোন কর্মকর্তা হবে। কিন্তু দরিদ্র চা দোকানী পিতা কি করে পূরন করবে মেয়ের স্বপ্ন তা ভেবেই শংকিত পরিবার। মেয়ের ভবিতষৎ লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সমাজের বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা কামনা করে পরিবারটি। স্কুলটির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিএম আতাউর রহমানের কাছ থেকে এ খবর পেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী খাদিজার বাড়িতে মিষ্টি পাঠান। জাতীয় সংসদ অধিবেশনের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি খাদিজার সার্বিক খোজ খবর নেন। তার নির্দেশে জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা মুন্নী, প্রেস ক্লাব সভাপতি একেএম নাসিরুল হক, সাধারন সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারন সম্পাদক মোঃ ফজলু মুন্সী বাড়িতে গিয়ে খাদিজা ও তার পরিবারের খোজ খবর নেন। চীফ হুইপ তাৎক্ষনিকভাবে খাদিজার বসতঘর মেরামত করতে টিন ও দশ হাজার টাকা দেন। এছাড়াও জেলা পরিষদসহ কয়েকটি সংস্থাকে বৃত্তি দেয়ার নির্দেশ দেন।
অদম্য মেধাবী খাদিজা আক্তার বলেন, আমার ফলাফলের খবর পেয়ে চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী স্যার মিষ্টি পাঠিয়েছেন। ঘর ঠিক করার ব্যবস্থা করেছেন। আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। আমি আজ খুব খুশি।
খাদিজার বাবা চা বিক্রেতা মোশাররফ শরীফ বলেন, খাদিজার লেখাপড়ার প্রতি অসম্ভব আগ্রহ। ও কোনদিন ক্লাশ বাদ দেয়নি। আজ এমপি সাহেব আমার মেয়ে ও পরিবারের খোজ খবর নিয়েছে। ওর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ব্যবস্থা করেছে। আমার পরিবারের জন্য এত বড় খুশির দিন আগে কোনদিন আসেনি।
মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা এমদাদুল হক বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাজেট অধিবেশন চলার সময়ে আমাদের চীফ হুইপ স্যার সকল ব্যস্ততার মাঝেও এভাবে খাদিজার পাশে না দাড়ালে ওর লেখাপড়া চালানো খুবই কষ্টসাধ্য হতো।
জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা বলেন, অদম্য মেধা খাদিজার জন্য চীফ হুইপ মহোদয় জেলা পরিষদ থেকে বৃত্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়েদের শিক্ষাসহ শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি বৃত্তি উপবৃত্তি ছাড়াও মেয়েদের লেখাপড়া ফ্রী করাচ্ছেন। খাদিজা দরিদ্র পরিবারের অদম্য মেধাবী। ওর রেজাল্ট দেখে আমি নেতৃবৃন্দদের পাঠিয়েছি। ওর বাড়ি মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ দিয়েছি। এছাড়াও অন্য সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিও ওর পাশে থাকবে। ওর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আমরা ওর পাশে থাকবো। এরকম মেধাবী ছেলে মেয়েদের পাশে সকলের থাকা উচিৎ।