মাদারীপুরে বানরের ঘরে মানুষের বসবাস

মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মানুষের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি ছোট চায়ের দোকান করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছে নাদিরা। জমি কিনে ঘর নির্মান করে বসবাস করার মত পরিস্থিতি বা টাকা উপার্জন নেই নাদিরার পরিবারের। তাই একটি ঘরের অভাবে ৮ বছরের সন্তান নিয়ে একমাত্র বানরের খাবারের ঘরে বসবাস করছে দীর্ঘদিন যাবত মাদারীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধা আব্দুর রহমান হাওলাদার মেয়ে নাদিরা।
জানা যায়, ফরিদপুর বন বিভাগের বিশেষ প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ফরিদপুরের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বানরকে খাবার দেয়ার একটি বরাদ্ধ পেয়ে বানরদের খাবার দিতে আসে সে সময় বানরদের একটি স্থানে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য ফরিদপুর ঠিকাদারের অর্থায়নে বানরকে খাবার দেয়ার জন্য একটি ঘর ও ৫টি পানি খাবার ঘর তৈরি করে এবং সে সময় প্রচুর বানর খাবার খেতে আসতো। কিন্ত এরপর বানরের জন্য সরকারিভাবে তেমন বরাদ্ধ না থাকায় আস্তে আস্তে বানরগুলো বিভিন্ন এলাকায় খাবারের জন্য চলে যায়। এরপর ২০০৬-৭ইং সাল থেকে পুণরায় খাবার দেয়া শুরু করে মাদারীপুর বন-বিভাগ। তবে সেটা অতি সামান্য হওয়ায় বছরের বেশীর ভাগ সময় অভুক্ত থাকে বানরগুলো এবং অনেক অর্থ বছরে বানরের জন্য কোন বরাদ্ধও ছিল না। এছাড়াও বানর সংরক্ষন করে একটি পর্যটন এলাকা তৈরি করার জন্য একটি ইকো পার্ক তৈরি করা হয় কিন্ত সেটারও কার্যক্রম তেমন কোন অগ্রগতি না থাকায় বানরগুলো জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলে যায় এবং বানরের ঘরগুলো খালি পড়ে থাকায় অসহায় ঘরহীন ৭টি পরিবার বানরের ঘরে ও তার পাশের জমিতে ঘর নির্মান করে বসবাস করছে। তবে বানরের ঘরগুলো কারা তৈরি করছে সঠিকভাবে কোন তথ্য মাদারীপুর বন বিভাগ দিতে পারেনি।

নাদিরা একটি নাম কিন্ত সেই নামের সাথে জড়িয়ে আছে কষ্ট। জম্মের পর থেকেই যেন দারিদ্রতা পিছু ছাড়ছে না। বলতে লজ্জা হলে বলতে দ্বিধা করে না আমি বানরের ঘরে থাকি। মাদারীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কুমার নদীর পাড়ে পৌর-কোলনীর পাশে নাদিরাসহ ৭টি পরিবার বানরের খাবার ঘর ও বানরের পানি খাওয়ার ঘর ও পাশের জমিতে কোন মতে ছাপড়াঘর নির্মান করে থাকছে। তবে নাদিরার ঘর নির্মান করার অর্থ ও জমি না থাকায় প্রায় ১ বছরের বেশী সময় ধরে বানরের খাবারের ঘরে বসবাস করছে।

বানরের ঘরে বসবাসা করা নাদিরা বলেন, আমি অসহায় হয়ে আজ বানরের ঘরে থাকি আমার থাকার কোন স্থান নেই, যদি থাকতো আমি বানরের খাবার দেয়ার ঘরে থাকতাম না’ তবে এখন আর এখানে কোন বানর দেখা যায় না এবং কেউ খাবারও দেয় না। খালিই পড়ে ছিল ঘরটি তাই আমি আমার সন্তান ও স্বামী মনজুর আলমকে নিয়ে থাকি পাশাপাশি এখানে একটি ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের কিছু খরচ তোলার চেস্টা করছি।’

বানরের ঘরে বসবাস করার নাদিরা বেগমের বৃদ্ধা বাবা আব্দুর রহমান হাওলাদার বলেন, আমার কোন জমি জমা নেই। আমার থাকার ঘর নেই’ মেয়ে বা তার স্বামীকে কোথায় থাকতে দেবো’ তাই বাধ্য হয়ে বানরের ঘরে থাকে। সরকার যদি সহযোগীতা করে তাহলে হয়তো আর বানরের ঘরে আমার মেয়ে থাকবে না।

মাদারীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডেরর কমিশনার মো. খলিলুর রহমান বেপারী বলেন, বানর খাবার না পেয়ে এখন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে বিশেষ প্রজেক্টের মাধ্যমে বানরের খাবারের ঘর করে ফরিদপুর বন-বিভাগের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এবং দেখভাল করার জন্য দায়িত্ব্য দেয়া হয় পৌরসভাকে কিন্ত তাদের দেখভাল না থাকায় বানরের ঘরটি খালি পড়ে ছিল, তাই হয়তো একটি পরিবার সেখানে থাকে। তবে যদি খাবার দেয়া শুরু হয় তাদের সরাতে সময় লাগবে না। তাছাড়া যদি তাদের থাকার স্থান না থাকে তাহলে আমি সরকারি সহযোগীতা ছাড়াও নিজে আর্থিক সহযোগীতা করবো। এছাড়া ঐখানে বানরের খাবারের ঘর ছাড়াও পানি দেয়ার ৫টি ঘর রয়েছে সেগুলোও পরিস্কার করে দেয়া হবে।’

মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা তাপস কুমার সেন গুপ্ত জানান, আমি জানতাম না বানরের কোন খাবারের ঘর আছে তবে এই ঘরগুলো আমাদের বন বিভাগের কিনা আমি নিশ্চিত না। হয়তো জেলা পরিষদ করতে পারে। তবে আমরা ফরিদপুর যোগাযোগ করে দেখবো কারা এই প্রতিষ্ঠান করেছে। এরপর বলতে পারবো। তবে যেহেতু এগুলো বানরের জন্য তৈরি করা হয়েছে তাই এগুলো অতিসত্তর খালি করা হবে।’

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, যাদের ঘর নাই তাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনায় তাদেরকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি। এবং এরকম যদি কেউ থাকে তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধু পল্লী নামকরন করে তাদের সেখানে আমরা আশ্রয় দেবো। আর বানরের ঘরে কেন মানুষ বসবাস করে, কেন এটা যন্ত করা হচ্ছে না। সেটা আমি জেলা বন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।’

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সকল গৃহহীন মানুষকে গৃহ দিবেন এবং তিনি সেটা দিচ্ছেন। আর এরকম ঘটনা আমার জানা নেই তবে এরকম সমস্যা যদি হয়ে থাকে তার জন্য আমরা সরকারিভাবে পূর্ণবাসন করে গৃহ দেয়ার ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া বানরের জন্য যে ইকো পার্কের কাজ শুরু হয়েছিল তার উন্নয়নের কাজের জন্য সরকারি ভাবে প্রায় ৩১ কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।’