গ্রাম্য কুসংস্কারের ভয়ংকর পরিনতি !

শিবচর বার্তা ডেক্স :
শিবচরে গ্রাম্য কুসংস্কারের এক ভয়ংকর পরিনতি হয়েছে। কুসংস্কারে বিশ্বাস করে স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আপন চাচী তার ২ বছর ৪ মাস বয়সী ভাতিজাকে অপহরন করে গলাটিপে হত্যা করে লাশ নির্মানাধীন টয়লেটের মেঝের নীচে বালু চাপা দিয়ে রাখে। আটকের পর শিশুটির চাচী নার্গিস বেগম শিশু হত্যার দায় শিকার করে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
স্থানীয় , পারিবারিক ও মামলার সুত্রে জানা যায়, শিবচরের কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার ওহাব বেপারির বড় ছেলে আবুল হোসেন বেপারির মৃত্যুর পর তার স্ত্রী নার্গিস ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি পাশর্^বর্ত্তী শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকাতে বসবাস করে। স্বামী পীরের বাড়িতে গিয়ে মারা গেলেও নার্গিস এ মৃত্যুর জন্য শশুরসহ ওই বাড়ির লোকদের বান মারাকে দায়ী করতো। এছাড়াও স্বামীর মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই ইসমাইল বেপারিকে নার্গিস বিয়ে করতে চাইলে পরিবারটি এতে রাজী হয়নি। উভয় ঘটনার সাথে জমিজমা নিয়েও বিরোধ ছিল এদের মাঝে। গত মঙ্গলবার ওহাব বেপারির বাড়িতে বেড়াতে আসে নার্গিস আক্তারের মেয়ে হাফসা আক্তার(১৪)।পরদিন বুধবার সকালে মা নার্গিস ফোন দিলে মেয়ে হাফসা বাড়িতে রওনা করে । চলে যাওয়ার আগে হাফসা চাচা ইসমাইল বেপারির স্ত্রী ময়না বেগমের কাছ থেকে তার একমাত্র শিশু সন্তান কুতুবউদ্দিনকে কোলে নেয়। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে সটকে পড়ে। সন্তানসহ ভাবী ও হাফসাকে নাওডোবার বাড়িতে গিয়েও না পেয়ে কুতুবউদ্দিনের বাবা ইসমাইল বেপারি শিবচর থানায় বুধবার অভিযোগ করে। অভিযোগ পেয়ে অভিযোগ পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, ওসি মোঃ মিরাজ হোসেন , পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ আমির সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। । একটি মাদ্রাসার সিসিটিভি দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে তার মা নার্গিসের কাছে দেয়। নার্গিস শিশুটিকে কাপড়ে ঢেকে সটকে পরে। কিন্তু কোন কিছুতেই নার্গিস বিষয়টি স্বীকার করছিল না। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নার্গিস তার ঘরের ভেতরের মধ্যে নির্মানাধীন টয়লেটের মাটির নীচে শিশুটিকে পুতে রাখা হয়েছে বলে জানায়। পরে পুলিশ নার্গিসকে নিয়ে গত শুক্রবার ভোর রাতে তার ঘরের টয়লেটের মেঝেতে পুতে থাকা অবস্থায় কুতুবউদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে চাচি নার্গিস শিশু কুতুবউদ্দিকে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চায়। পরে ওই আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুর রহমান চাচির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে চাচি নার্গিস আক্তার শিশু কুতুব উদ্দিনকে হত্যার দায় শিকার করেন। তিনি কিভাবে তার মেয়ে হাসফার মাধ্যমে শিশুকে তার বাড়ী থেকে কৌশলে এনে হত্যা করে নিজ বাড়ীর ভবনের নির্মানাধীন টয়লেটের মেঝের নীচ বালু চাপা দেয় তারও বনর্ণা দিয়েছেন। পরে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। তবে নার্গিস আক্তারের মেয়ে হাফসা আক্তার ১৩ বছর বয়সী হওয়ায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়নি। তাকে আদালতের কিশোরী জেলে রাখা হয়েছে।
নিহত শিশুর দাদা ওহাব বেপারি বলেন, আমার বড় ছেলে পীরের বাড়িতে মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলের বৌ নার্গিস আমাদের দোষারোপ করতো। আমরা নাকি বান মাইরা মারছি নিজ ছেলেরে। এরপর সে ইসমাইলকে বিয়ে করতে চাইলে আমরা রাজী হইনি। এরপর থেকেই সে খুব খারাপ ব্যবহার করতো খুব চাপ দিতো আমাদের। এই ঘটনার জের ধরেই ও ইসমাইলের ছেলেকে মারতে পারে।
লাশটি উদ্ধারের সময় পুলিশের সাথে কথোপকথনকালে নার্গিস বেগম বলেন, ওরা আমার স্বামীরে হত্যা করছে। খুব আচরন করতো। কেন মারলেন বাচ্চাটাকে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নার্গিস আবারো বলেন,ওরা আমার স্বামীরে বান মাইরা মারছে।

শিবচর থানার ওসি মোঃ মিরাজ হোসেন বলেন, নার্গিস মূলত তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য তার শশুর বাড়ির লোকদের উপর ক্ষিপ্ত,পরবর্তিতে বিয়ে নিয়েও ক্ষুদ্ধ ছিল। সে তার মেয়েকে দিয়ে শিশুটিকে খুব কৌশলে আনে। আমাদের ধারনা সে ও তার মেয়ে দুজনে মিলে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। নার্গিস নিজেই দেখিয়েছি লাশের অবস্থান। নার্গিস শিশু হত্যার দায় স্বীকার করে মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।