মাদারীপুরে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত-৩৫, আটক ৭

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১২ পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত ৩৫ জন। এ সময় অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটও করা হয়। ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে পুলিশ। এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে পৌরসভার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৭ জনকে। মাদারীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের চর খাগদী এলাকায় বুধবার রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘন্টা চলে এই সংঘর্ষ। আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম সরদার, এসআই রবিউল ইসলাম, এএসআই মাসুদ বেপারী, কনস্টেবল মনোয়ার হোসেন। এছাড়া চরখাগদী এলাকার আসাদ চৌকিদার (৪০) ও তামিম মৃধার (১৭) নাম পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, মাদারীপুর পৌরসভার চরখাগদী এলাকার সাবেক কাউন্সিল খলির বেপারীর চাচাতো ভাই সোহরাব বেপারীর ছেলে সিমান্ত বেপারী বুধবার সন্ধ্যায় মোটরসাইকেল নিয়ে চরমুগরিয়া বাজারে যাচ্ছিল। তার মোটরসাইকেলটির সঙ্গে একই এলাকার মিন্টু মৃধার ছেলে আশিক মৃধার শরীরের ধাক্কা লাগে। এ ঘটনার বিরোধ মিটাতে দুপক্ষের লোকজন চরমুগরিয়া বাজারের মতিন মৃধার দোকানে সালিশে বসেন। সালিশে দুপক্ষের বাকবিতন্ডায় একই এলাকার মনু বেপারীর ছেলে রাতুল বেপারীকে মারধর করেন মিজান মৃধার ছেলে সজল মৃধা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেপারী ও মৃধা বংশের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টানা দুইঘন্টার সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০টি বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংঘর্ষে থানা পুলিশের পরিদর্শক সেলিম সরদারসহ ১২ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এছাড়া উভয়পক্ষের আরো ২৩ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে সদর হাসপাতালে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এই ঘটনার বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তৈয়ব হাওলাদারের স্ত্রী নাদিরা আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে শুনি মারামারি লাগছে, আমাদের ঘরের পুরুষ লোক দেশের বাহিরে থাকে। ঘরের থাই গ্লাসগুলো ভেঙ্গেচুরে চুরমার করেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেনের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে। আমরা নারীও থাকি। সবার মাঝে এখন নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। এমন সংঘর্ষ হলে কিভাবে বসবাস করবো।’
আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘ঘর থেকে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। যেখানে যা আছে, সবকিছুই নিয়ে গেছে। ঘরের ভেতর ঢুকে নারী সদস্যদেরও মারধর করেছে। এই ঘটনার বিচার চাই।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম সরদার জানান, সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঠিক তখনই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে দুইপক্ষই। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়।’
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএস সালাউদ্দিন জানান, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় মাদারীপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশার বেপারীসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটিপক্ষ এই সংঘর্ষে জড়ায়। যারা সরাসরি এই ঘটনায় জড়িত ছিল সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’