মাদারীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় মিছিলে বোমা হামলায় আহত সমর্থকের মৃত্যু

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
মাদারীপুরের কালকিনিতে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের বিজয় মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় গুরতর আহত এমারত সরদার (৪০) মারা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে রাজধানী ঢাকার প্রাইম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত এমারত কালকিনি উপজেলার আলী নগর ইউনিয়নের কালিনগর এলাকার মৃত ফজর আলী সরদারের ছেলে।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপকে পরাজিত করে বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। এ কারণে সোমবার সকালে তাহমিনার সমর্থক আলী নগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ওরফে মিলন সরদারের নেতৃত্বে একটি বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কালিগঞ্জ থেকে ফাসিয়াতলা বাজারের যাবার পথে আলীনগর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজের সমর্থকরা মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে এমারত সরদারসহ আহত হয় অন্তত ১০ জন। গুরতর এমারত সরদারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই দিনই শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় এমারত সরদারকে প্রাইম হাসপাতালের নিবিড় পর্যাবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। টানা তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি মারা যান।
প্রাইম হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বোমা হামলায় আহত এমারত আমাদের এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তাকে স্পেশালি ভাবে তদারকি করা হয়েছে। তার অবস্থা আগে থেকেই খুব খারাপ ছিল। মুলত তার শরীরের রক্তে পয়জন ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে অনেক চেষ্টার পরেও রোগীকে আর বাঁচানো সম্ভভ হয়নি।’
নিহত এমারতের বড় ভাই এমদাদ সরদার বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা ঈগলের সমর্থক করছিলাম। ঈগল বিজয়ী হলে আমরা বিজয় মিছিল করছিলাম। ওই মিছিলে আমিও ছিলাম। আমাদের মিছিলে নৌকার অনুসারী শাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে বোমা হামলা চালানো হয়। ওই বোমার আঘাতে আমার ভাইডা মইরা গেলো। হাসপাতালে অনেক চেষ্টা দৌঁড়াদৌঁড়ি করেও ভাইডারে বাঁচাইতে পারলাম না।’
জানতে চাইলে নিহত এমারতের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমার সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। রোজগার করার মত ঘরে কেউ নাই। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে। আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার চাই।’
এ সম্পর্কে সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম বলেন, ‘বিজয় মিছিলে যাওয়ার সময় নির্বাচনে আমার প্রতিপক্ষ শাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে বোমা হামলা করে। এই হামলায় আমরা দুজন কর্মী গুরতর আহত হন। তাদের মধ্যে একজন এমারত চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেল।’
তিনি আরও বলেন, বিজয়ের পরে বিজয় মিছিল হতেই পারে। তাই বলে প্রতিপক্ষ বোমা মেরে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়া ঘটনা পুরোটাই পরিকল্পিত। পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আলী নগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজ বলেন, ‘এমারত মারা গেছে শুনেছি। এখানে আমাকে রাজনৈতিক কারণে দায়ী করা হচ্ছে। আসল সত্য হচ্ছে, এমারত নিজে বোমা বহন করতে গিয়ে বিস্ফোরণে তার হাত ও পায়ে গুরতর আহত হয়। কেউ তার ওপর হামলা চালায় নাই। পুলিশ তদন্ত করলে পুরো সত্য ঘটনাটি জানতে পারবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বোমা হামলায় আহত এমারত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মারা গেছে এমন খবর শুনেছি। তা ছাড়া বোমা হামলার ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। এই বিষয় আইনগত যে ধরণের প্রক্রিয়া রয়েছে সবই করা হবে।’