মাদারীপুর রেকর্ড রুমে জনবল সংকটে পর্চা পেতে ভোগান্তি

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর :
মাদারীপুরে জমিজমার পর্চার নকল পেতে চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি মাসের পর মাস এই কাগজ না পেয়ে মামলাসহ বিভিন্ন কাজে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। বার বার অফিসে আসা-যাওয়া করেও তারা সময় মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পাচ্ছেন না। রেকর্ড রুমে জনবল সংকটে পেন্ডিং রয়েছে কয়েক হাজার আবেদন।
ভূক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার নয়াচরের মুজাফ্ফর বেপারীর ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বেপারী। ৪ মাস আগে একটি পর্চা পেতে নিয়ম মেনে অনলাইনে আবেদন করেন। জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুম আর ই-সেবা কেন্দ্রে ১২ বার গিয়েও ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। আরেক ভুক্তভোগী জাজিরা গ্রামের আনোয়ার মোল্লার ছেলে নিরব মাহামুদ। তার অভিযোগ, দালাল না ধরায় দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে পর্চা পেতে। এতে হতাশাগ্রস্থ তিনি। শুধু জাহাঙ্গীর বেপারী কিংবা নিরব মাহামুদ’ই নন, এখানে সেবা নিতে আসা অধিকাংশ আবেদনকারী জানান, মামলা-মোকাদ্দমা, জমি ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাংক ঋণসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয় জমিজমার পর্চা। ৩-১০ দিনের মধ্যে বিতরণের নিয়ম থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর্চা না পাওয়ায় আটকে আছে বিভিন্ন কার্যক্রম। বার বার আসা-যাওয়ায় আর্থিক অপচয়ের সাথে বেড়েছে হয়রানি আর ভোগান্তি।
একাধিক সূত্র জানায়, সই মোহরার এই পর্চা পেতে সরকার নির্ধারিত ফি মাত্র ১০০ টাকা। অতিরিক্ত ৪০ টাকা দিলে ডাকযোগেও এই কাগজ পাঠানোর বিধান রয়েছে। জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুম শাখায় কর্মরত রয়েছেন মাত্র দু‘জন। প্রতিদিন গড়ে ৩ শ-৪ শ আবেদন পড়ে। আর জমিজমার এমন গুরুত্বপূর্ণ কাগজ বিতরণ করা হয় মাত্র দেড়শো থেকে দু‘শো।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বেপারী বলেন, ‘আমি চারমাস যাবৎ আসছি পর্চা নিতে। কিন্তু কর্মকর্তারা একবার রেকর্ড রুমে পাঠায়, আরেক বার ই-সেবা কেন্দ্রে পাঠায়। কেউ নির্দিষ্ট করে সঠিক কিছুই বলছেন না। কবে যে পর্চা পাবো জানি না। একটি মামলা চলছে আদালতে, পর্চার জন্য মামলার গতিও কমে যাচ্ছে।’
নিরব মাহামুদ বলেন, ‘এখানে দালাল ধরলে কাজ দ্রুত হয়। আমরা সাধারণ মানুষ নির্দিষ্ট সময়ে পর্চা পাচ্ছি না। এর একটা প্রতিকার চাই।’
আরিফুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘শত শত সেবা প্রত্যাশী আবেদন করে রেখেছে পর্চার জন্য। যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের লোকবল নাই, তাই দেরি হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, রাজস্ব শাখায় বেশকিছু জনবলের ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে জনবল সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই রেকর্ড রুমের জন্য এই জনবল নিয়োগ বা দায়িত্ব দেয়া হবে। এক মাসের মধ্যে এই সমস্যা কেটে যাবে।’