মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আচরনবিধি লঙ্ঘনের

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসাঃ তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী। এ নিয়ে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। এ ঘটনায় উভয় প্রার্থীর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসাঃ তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী তার অভিযোগে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসাঃ তাহমিনা বেগম গত ২৯ নভেম্বর বুধবার গাড়ি বহরসহ বহিরাগত ও তার অনুসারিদের সঙ্গে নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্ড পার্টি, ঢোল বাদ্য যন্ত্র, বাঁশি বাজিয়ে ও খিচুরী ভোজন পরিবেশন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান (যার স্থির ও ভিডিও চিত্র অভিযোগকারীর নিকট রয়েছে)। কিন্তু, উক্ত তারিখে তিনি জমা না দিয়ে নাটকীয় কায়দায় ফেরত নিয়ে পুনরায় পরের দিন ৩০ নভেম্বর সকালে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যাহা নির্বাচরী আচরন বিধি ভঙ্গের সামিল। রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শরিফুল হক অভিযুক্তকে আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলেন। মঙ্গলবার (৫ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় মোসাঃ তাহমিনা বেগম নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ শরিফুল হক-এর আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। একই সময় অভিযোগকারীও আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসা. তাহমিনা বেগম এর একই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মো.শরিফুল হকের আদালতে হাজিরা দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপ।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোসা. তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ও তার একজন সমর্থক দুই জনেই একই ধরণের অভিযোগ করেছেন আমার বিরুদ্ধে। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। অভিযোগে ঘটনার দিন যা বলা হয়েছে, তার কিছুই ঘটেনি। এই ঘটনার মধ্যে কোন সত্যতা নেই। ওইদিন কোন ধরণের খিচুরি ভোজন বা ঢাক ঢোল বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়নি। অথচ ওনারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য, আমাকে হয়রানি করার জন্য এই অভিযোগ করেছেন তারা।’
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ বলেন, স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগম ও আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী তৌফিকুজ্জামান আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। ব্যাপক সমাগমের মধ্য দিয়ে আমি নাকি মনোনয়পত্র জমা দিয়েছি। সেখানে আমি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি। গত রবিবার (৩ ডিসেম্বর) আমি আদালতে সশরীরে এসে বলেছি, ‘আমি এধরণের আচরণ করিনি। আমিও একটি অভিযোগ করেছিলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম ও আরেক প্রার্থী তৌফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে। তারাও ব্যাপক সমাগমের মধ্য দিয়ে ঢাল ঢোল পিটিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তারাও নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন।’
নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা জজ আদালতের পেশকার মো: আনোয়ার হোসেন বলেন. ‘উভয় পক্ষের শুনানী শেষে স্যার (বিচারক) সুপারিশ আকারে উভয় পক্ষের দুইটি চিঠি গতকাল একটি এবং আজ একটি প্রধান নির্বাচন অফিসের উপ-সচিব (আইন), নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আগারগাঁ, ঢাকা বরাবরে প্রেরণ করেছেন।’