শিবচরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ের ট্রমা সেন্টারটি অরক্ষিত, ঘটছে চুরিসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা

শিবচর বার্তা ডেক্স :
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা দিতে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা ্এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের সন্ন্যাসীরচরে নির্মাণ করা হয় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টার। ব্যয় হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। এক বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রী হাসপাতালটি উদ্বোধন করলেও এখনো ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। নেই নুন্যতম পাহারাদারও। ফলে সম্পূর্নভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ট্রমা সেন্টারটি। ঘটছে চুরিসহ অনাকাঙ্খিত সব ঘটনা। গত ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে চোর চক্র ট্রমা সেন্টারটির সাব স্টেশনের কয়েকটি কক্ষ ভাংচুর করে ও পানির কলসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়াও সাব স্টেশনে বড় ধরনের চুরির চেষ্টাকালে বড় ধরনের বিস্ফোরন হয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে থানায় অভিযোগ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ।
সরেজমিনে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরের এই ট্রমা সেন্টারের অবস্থান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের (ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে) একদম পাশে। গত ১৯ মার্চ শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় মারা যান ১৯ জন। আহত হন অন্তত ২৫ জন। আহতদের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এক্সপ্রেসওয়ের পাশের বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটলেও ট্রমা সেন্টারটি চালু না হওয়ায় কোন ধরনের সেবাই পাচ্ছে না দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রীরা। ট্রমা সেন্টারে নেওয়া হয়নি; কারণ, সেটি চালু হয়নি।
মহাসড়কের পাশে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করার উদ্দেশ্য ছিল, দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আহতদের সেখানে নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসা দেওয়া, যাতে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়।
সংশ্লিস্ট সুত্রে আরো জানা যায়, প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ), দুজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। উদ্বোধনের এক বছর হয়ে গেলেও লোকবল নিয়োগই এখনো সম্পন্ন হয়নি।
মাদারীপুরের শিবচরে নির্মিত ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধন করা হয় ২০২২ এর ৮ নভেম্বর। ট্রমা সেন্টারটির নির্মাণ ব্যায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৭ টাকা।
উদ্বোধনের দিন ট্রমা সেন্টারে জেলা ও উপজেলার চিকিৎসক ও নার্স থাকলেও পরের দিন থেকে ট্রমা সেন্টারটি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ট্রমা সেন্টারের সব কয়টি কক্ষ তালাবদ্ধ। স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই ট্রমা সেন্টারে।
দূরপাল্লার বাস চালক আঃ সালাম বলেন, পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেস হাইওয়ে এত সুন্দরভাবে চালু হলেও
ট্রমা হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় কোন দূর্ঘটনা ঘটলেই রোগী নিয়ে দূরের হাসপাতালে যেতে হয়।
স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক মোঃ করিম মিয়া বলেন, সড়কে দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু কিছু হলেই এতো বড় হাসপাতাল থাকতেও রোগী নিয়ে টানাটানি করতে হয়। তাহলে সরকারের এত টাকা খরচ করে কি লাভ হলো।
স্থানীয় অনেকেই বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা হাসপাতালটি নির্মান হলেও একজন পাহারাদারও নিয়োগ দেয়া হয়নি। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতারই প্রমান। কারন পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেস হাইওয়েকে ঘিরে নির্মিত এ হাসপাতালটি খুবই জরুরী যাত্রী ও শ্রমিকদের জন্য।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: সেলিনা আক্তার বলেন, চোর চক্রের হামলার ঘটনাটি জানার পর সিভিল সার্জন স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। থানায় জানানো হয়েছে। অফিসিয়ালি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই আমরা জানতে পারবো ঘটনাটি কি ঘটেছিল। আসলে কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলা সম্ভব না। এখানে সাব স্টেশনের সার্টারের লকের রিং কেটে ভিতরে প্রবেশ করা হয়েছিল। এর নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই জনবল প্রয়োজন। নতুন জনবল নিয়োগ হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রাম পুলিশ, আনসার দিয়ে এটার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ট্রমা সেন্টারটি নির্মান কাজ শেষে হ্যান্ডওভার হয়েছে। এর প্রশাসনিক অনুমোদন বা জনবল নিয়োগ আমরা আশা করছি শির্ঘ্যই হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শিবচর থানার সেকেন্ড অফিসার মোঃ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিস্ফোরনের পর রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে থানা পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি জিডিও করা হয়েছে। মূলত কোন ধরনের লোকবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত রয়েছে।