ভূমধ্যসাগরে হিটস্ট্রোকে মাদারীপুরের ৫ যুবকের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে বেঁচে যাওয়া হৃদয়

সুবল বিশ্বাস :
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাবার সময় লিবিয়ার ভুমধ্যসাগরে হিটস্টোকে আরও চারজনসহ ৫ যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে একই বোটে বেঁচে যাওয়া যুবক হৃদয় মিয়া। রবিবার রাতে নিহতদের পরিবারের কাছে সে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এরা হলেন-রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট ঘোসালকান্দি গ্রামের মোশারফ কাজীর ছেলে হৃদয় কাজী (২২), শংকরদী গ্রামের আজিজুল সিকদারের ছেলে সাগর সিকদার (২৩), হোসেনপুর গ্রামের আজিজ শেখের ছেলে জিন্নাত শেখ (২৫), উল্লাবাড়ি গ্রামের বিজেন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সাধন মল্লিক (২৪) এবং পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের ফজলু মুন্সীর ছেলে সজিব মুন্সী (২০)। মৃত যুবকদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় আদরের সন্তানকে হারিয়ে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এই ঘটনায় দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
স্বজনরা জানায়, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পরে পড়ে রাজৈর ও আশপাশের অনেকেই লিবিয়ায় আটকা পড়ে। গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দালালরা ইতালীর উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে তাদের। অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাটির ইঞ্জিন ভূমধ্যসাগরে নষ্ট বিকল হয়ে গেলে তারা ৪দিন সাগরে ভাসতে থাকে। এতে প্রচন্ড রোদ ও গরমে হিটস্টোকে প্রাণ হারায় তারা। একই বোর্টে থাকা ঘোষালকান্দি গ্রামের ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়াসহ আরো ৫/৬জন অসুস্থ হলেও হৃদয় মিয়া ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। পরে সেই দেশের নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড জীবিতদের উদ্ধার করে তিউনেশিয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা সুস্থ হলে হৃদয় মিয়া রবিবার রাতে ফোন করে বলেন, ‘ঘটনার দিন প্রথমে হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা যায়। আর সাগর সিকদার, জিন্নাত শেখ, সজিব মুন্সী ও সাধন মল্লিক নিখোঁজ থাকার পর খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারি তারাও মারা গেছে। আমরা তিউনেশিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি।’
মৃত জিন্নাত শেখের মা হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, রাজৈর উপজেলা সত্যবর্তী গ্রামের দালাল রেজাউল শেখ ও শহিদুল মোল্লা আমার ছেলেকে ইতালী পৌছে দিবে বলে কয়েক দফায় ১১লক্ষ টাকা নিয়েছে। তার পর আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।’
তপারকান্দি গ্রামের মৃত সজিব মুন্সীর মা শাহানা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে সজিবের সাথে সর্বশেষ আমার সাথে ১৮ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে। তখন আমার ছেলে আমাকে বলছিল মা আমার জন্য দোয়া করো আমাকে এখন দালাল গেম ঘরে নিবে। এর পর আর কথা হয়নি। কয়েক দফায় সত্যবর্তী গ্রামের দালাল শাহিন সরদার আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরও আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমি এর বিচার চাই।’
ভুক্তভোগি ও এলাকাবাসী জানায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের মানব পাচারচক্রের সদস্য ইলিয়াছ ফকির, টুটুল ফকির এবং রাজৈর উপজেলার সত্যবর্তী গ্রামের শাহিন সরদার, রেজাউল শেখ, শহিদুল মোল্লা, ইলিয়াছ শেখ ও শ্রীরামপুরের লিটন মোল্লা ইতালী যাবার স্বপ্ন দেখিয়ে এক এক পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফা আদায় করে সাড়ে ৭ লাখ থেকে ১১লাখ টাকা পর্যন্ত। ধারদেনা করে এই টাকা জোগাড় করে দিলেও শেষরক্ষা হয়নি এসব পরিবারের। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’