ঈদ যাত্রায় রিফাত ফিরলো ফেরিতে লাশ হওয়া মাকে নিয়ে

শিবচর বার্তা ডেক্স :
ঈদ উপলক্ষে গার্মেন্টসকর্মী মায়ের সাথে নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বালীগ্রাম ফিরছিল ১৪ বছরের ছোট্র রিফাত। বাবার কাজ থাকায় সে নারায়নগঞ্জেই থেকে যায়। ঈদের দুদিন পর আসবে বাবা। তাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছোট বোন আজমীরিকে নিয়ে মায়ের সাথেই ঈদ করবে রিফাত। ঈদের কেনাকাটা করে তাইতো পথে পথে অনেক ভোগান্তির শিকার হয়ে বুধবার দুপুরে শিমুলীয়া ঘাটে এসে পৌছায় রিফাত, তার মা নিপা বেগম, চাচা গার্মেন্টসকর্মী উজ্জল বেপারী, শাকিল বেপারী ও মো: ইমরান। ঘাটে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বাংলাবাজার ঘাট থেকে রোরো ফেরি এনায়েতপুরী ১৫ টি যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে পৌছায়। এসময় ফেরিটি যানবাহন ঘাটে নামানোর আগেই শিমুলীয়া ঘাট থেকে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী ফেরিতে উঠতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেই সাথে রিফাত , তার মা নিপা বেগম ও তার এক চাচা ইমরানও ফেরিটিতে উঠে পড়ে। তবে যাত্রীদের এতই হুড়োহুড়ি ছিল যে রিফাত, তার মা ও চাচা ইমরান ৩ জন তিন প্রান্তে হারিয়ে যায়। এ অবস্থায় তারা যে যেখানে ছিল সেখানেই কোনমতে দাঁড়িয়ে থাকে। রিফাতের বাকি দুই চাচা উজ্জল ও শাকিল ফেরিটিতে উঠতে না পেরে পরবর্তী ফেরির অপেক্ষায় পাড়েই দাঁড়িয়ে থাকে। যাত্রী বোঝাই করে প্রায় ৩ ঘন্টা অপেক্ষার পর যাত্রীদের চাপে লোড করা যানবাহন শিমুলীয়া ঘাটে না নামিয়েই যাত্রী বোঝাই ফেরিটি আবার বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। প্রচন্ড গরমে দীর্ঘ সময় তপ্ত রোদে গাদাগাদি করে দাঁিড়য়ে থেকে ফেরির মধ্যেই রিফাতে মা নিপা বেগমসহ ফেরির অন্যান্য যাত্রীরা শারিরিকভাবে অসুস্থ্য হতে শুরু করে। ফেরিটি মাঝ পদ্মায় যখন পৌছে তখন ফেরিটির শতাধিক যাত্রী অসুস্থ হয়ে নিচে পড়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে। অন্য অসুস্থ্য যাত্রীদের সাথে নিপা বেগমও অসুস্থ্য হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেরির উপর পড়ে যায়। কিন্তু ছেলে রিফাত ফেরির অন্য প্রান্তে থাকায় বুঝতেই পারেনি তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। এ অবস্থায় ফেরিটি বাংলাবাজার ৩ নং ঘাটে আসার সাথে সাথে শতাধিক যাত্রী নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে গরম থেকে কোনমতে বাচার চেষ্টা করে। রিফাত ফেরি থেকে নেমে তার মাকে চারদিকে খুঁজতে থাকে। তখনও সে জানেনা তার মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর ফেরির অন্য যাত্রীরা তার মায়ের মাথায় পানি ঢেলে বাতাস করে সুস্থ্য করে তোলার চেষ্টা করছে। এসময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ফেরিতে গিয়ে নিপা বেগমকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে পাড়ে তুলে আনতে আনতেই তার মৃত্যু হয়। প্রশাসনের হেফাজতে নিপা বেগমের লাশ রাখা হয়। এমনি সময় রিফাত তার মাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। মরদেহটির উপর চোখ পড়তেই রিফাত মা বলে চিৎকার দিয়ে লাশের উপর পড়ে যায়। এসময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। পড়ে অন্য ফেরিতে রিফাতের দুই চাচা বাংলাবাজার ঘাটে এসে পৌছলে তাদের কাছে নিপা বেগমের লাশ হস্তান্তর করা হয়। ছোট্র রিফাতের ঈদ আনন্দ গ্রাস করে নিল পদ্মা। ফেরিতে অসুস্থ্য পড়ে পড়া বরিশালের হিজলা উপজেলার হারুন মিয়াসহ (৪৫) ৪ জন মারা গেছে। এরআগে রো রো ফেরি শাহ পরানে শরীয়তপুরের পালং এর আনসুর মাদবর(১৫) নামের এক কিশোর মারা যায়।

রিফাতের চাচা উজ্জল বলেন, আমার ভাই, ভাবী, আমি আমার ছোট ভাইসহ চার জন নারায়নগঞ্জে গার্মেন্টসে চাকুরী করি। ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরছিলাম। ফেরিতে ভীড় বেশি থাকায় আমি আর আমার ছোট ভাই ফেরিতে উঠতে পারিনি। রিফাত আমার ভাবী ও আমার ফুফাতো ভাই ইমরান এক ফেরিতে ছিল। সেখানেই গরমে অসুস্থ্য হয়ে আমার ভাবীর মৃত্যু হয়েছে।
রিফাত বলেন, ঈদের সব কেনাকাটা করে মায়ের সাথে বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়িতে ছোট বোন আছে। সবাইকে নিয়ে ঈদ করবো বলে মায়ের গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার সাথে সাথেইবাড়ি যাচ্ছিলাম। ফেরিতে আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এখন আমি মা কোথায় পাবো।
ফেরি এনায়েতপুরির মাস্টার ইনচার্জ মোঃ রেজা মুঠোফোনে বলেন, শিমুলিয়ায় যাত্রী চাপে আমরা বাংলাবাজার থেকে নেয়া গাড়িও নামাতে পারিনি। পরে কত্তৃপক্ষের নির্দেশে সেই গাড়ি নিয়েই ফিরে আসি। প্রচন্ড গরমে এই ঘটনা ঘটেছে।

শিবচর থানার ওসি মোঃ মিরাজ হোসেন বলেন, ফেরি এনায়েরপুরিতে ৪ যাত্রী ও ফেরি শাহ পরানে ১ যাত্রী মৃত্যুবরন করেছে। প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোকে এসকল যাত্রীরা মারা গেছে বলে ধারনা করা হয়েছে।