স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুটির বাবাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল ঘাতক নার্গিস

শিবচর বার্তা ডেক্স :
স্বামী আবুল হোসেন বেপারীকে বান মেরে হত্যা করেছে বলে শশুরসহ শশুর বাড়ির লোকদের দোষারোপ করতো ঘাতক নার্গিস বেগম। এছাড়া স্বামীর মৃত্যুর পর দেবর ইসমাইল বেপারীকে (হত্যার শিকার শিশুর বাবা) বিয়েও করতে চেয়েছিল নার্গিস। তবে শশুর বাড়ির লোকজন রাজী না হওয়ায় দেবরকেও বিয়ে করতে পারেনি সে। মূলত এই দুইটি কারনেই শশুর বাড়ির লোকদের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল নার্গিস। তাই স্বামীর মৃত্যু ও দেবরকে বিয়ে করতে না পারার প্রতিশোধ নিতেই দেবরের ২ বছর ৪ মাস বয়সী ছেলেকে হত্যা করে বলে স্বীকার করেছে ঘাতক নার্গিস। যা গ্রাম্য কুসংস্কারের ভয়ংকর পরিনতি হিসেবে শিশুটিকে প্রান দিতে হলো। নিহত শিশুর দাদা ওহাব বেপারি বলেন, আমার বড় ছেলে পীরের বাড়িতে মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলের বৌ নার্গিস আমাদের দোষারোপ করতো। আমরা নাকি বান মাইরা মারছি নিজ ছেলেরে। এরপর সে ইসমাইলকে বিয়ে করতে চাইলে আমরা রাজী হইনি। এরপর থেকেই সে খুব খারাপ ব্যবহার করতো খুব চাপ দিতো আমাদের। এই ঘটনার জের ধরেই ও ইসমাইলের ছেলেকে মারতে পারে।

স্থানীয় , পারিবারিক ও মামলার সুত্রে জানা যায়, শিবচরের কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার ওহাব বেপারির বড় ছেলে আবুল হোসেন বেপারি তার এক পীরের বাড়ি গিয়ে মারা যায়। কিন্তু স্বামীর এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি গ্রাম্য কুসংস্কারে বিশ্বাসী নার্গিস বেগম। তার স্বামীকে বান মেরে হত্যা করা হয়েছে বলে শশুরসহ শশুর বাড়ির লোকদের দোষারোপ করতেন নার্গিস। স্বামীর মৃত্যুর পর ২ সন্তানের মা নার্গিস দেবর ইসমাইল বেপারীকে বিয়ে করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু শশুর বাড়ির লোকজন এতে রাজী না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয় নার্গিস। এছাড়া জমিজমা নিয়েও শশুর বাড়ির সাথে বিরোধ হচ্ছিল নার্গিসের। দেবরকে বিয়ে করতে না পারায় নার্গিস ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি পাশর্^বর্ত্তী শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা এলাকাতে বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে নার্গিসের দেবর ইসমাইল বিয়ে করে এক ছেলের বাবাও হয়। বিভিন্ন সময় নার্গিস শশুর বাড়িতে গিয়ে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে শশুর বাড়ির লোকদের সাথে ঝগড়া করতো। আর প্রায় ঝগড়ার সময়ই দেবর ইসমাইলের বংশ ধ্বংশ করার হুমকি দিত। গত মঙ্গলবার ওহাব বেপারির বাড়িতে বেড়াতে আসে নার্গিস আক্তারের মেয়ে হাফসা আক্তার(১৪)। পরদিন বুধবার সকালে মা নার্গিস ফোন দিলে মেয়ে হাফসা বাড়িতে রওনা করে । চলে যাওয়ার আগে হাফসা চাচা ইসমাইল বেপারির স্ত্রী ময়না বেগমের কাছ থেকে তার একমাত্র শিশু সন্তান কুতুবউদ্দিনকে কোলে নেয়। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে সটকে পড়ে। সন্তানসহ ভাবী ও হাফসাকে নাওডোবার বাড়িতে গিয়েও না পেয়ে কুতুবউদ্দিনের বাবা ইসমাইল বেপারি শিবচর থানায় বুধবার অভিযোগ করে। অভিযোগ পেয়ে অভিযোগ পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান, ওসি মোঃ মিরাজ হোসেন , পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ আমির সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নামে। । একটি মাদ্রাসার সিসিটিভি দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় হাফসা কুতুবউদ্দিনকে নিয়ে তার মা নার্গিসের কাছে দেয়। নার্গিস শিশুটিকে কাপড়ে ঢেকে সটকে পরে। কিন্তু কোন কিছুতেই নার্গিস বিষয়টি স্বীকার করছিল না। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নার্গিস তার ঘরের ভেতরের মধ্যে নির্মানাধীন টয়লেটের মাটির নীচে শিশুটিকে পুতে রাখা হয়েছে বলে জানায়। পরে পুলিশ নার্গিসকে নিয়ে শুক্রবার ভোর রাতে তার ঘরের টয়লেটের মেঝেতে পুতে থাকা অবস্থায় কুতুবউদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত শিশুর দাদা ওহাব বেপারি বলেন, আমার বড় ছেলে পীরের বাড়িতে মারা যাওয়ার পর থেকে ছেলের বৌ নার্গিস আমাদের দোষারোপ করতো। আমরা নাকি বান মাইরা মারছি নিজ ছেলেরে। এরপর সে ইসমাইলকে বিয়ে করতে চাইলে আমরা রাজী হইনি। এরপর থেকেই সে খুব খারাপ ব্যবহার করতো খুব চাপ দিতো আমাদের। এই ঘটনার জের ধরেই ও ইসমাইলের ছেলেকে মারতে পারে।
নিহত শিশুর বাবা ইসমাইল বেপারী বলেন, আমাদের সাথে ঝগড়ার সময় প্রায়ই আমার বংশ ধ্বংশ করে ফেলবে বলে হুমকি দিতো। এতদিন তার হুমকির মানে বুঝিনি। আজ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বুঝলাম।
লাশটি উদ্ধারের সময় পুলিশের সাথে কথোপকথনকালে নার্গিস বেগম বলেন, ওরা আমার স্বামীরে হত্যা করছে। খুব খারাপ আচরন করতো আমার সাথে। কেন মারলেন বাচ্চাটাকে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে নার্গিস আবারো বলেন,ওরা আমার স্বামীরে বান মাইরা মারছে।

শিবচর থানার ওসি মোঃ মিরাজ হোসেন বলেন, নার্গিস মূলত তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য তার শশুর বাড়ির লোকদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। পরবর্তিতে দেবরেকে বিয়ে করতে না পারায় চরম ক্ষুদ্ধ ছিল। সে তার মেয়েকে দিয়ে শিশুটিকে খুব কৌশলে আনে। আমাদের ধারনা সে ও তার মেয়ে দুজনে মিলে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। নার্গিস নিজেই দেখিয়েছি লাশের অবস্থান। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের প্রক্রীয়া চলছে। নার্গিসকে জেল হাজতে ও তার মেয়েকে শিশু আদালতে পাঠানো হয়েছে।