শিবচরে প্রধান শিক্ষকের সনদ জালিয়াতির তদন্ত পেশ, অভিযোগ প্রমানিত

শিবচর বার্তা ডেক্স :
মাদারীপুরের শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। দীর্ঘ দুই বছর পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সনদ জালিয়াতির আনীত অভিযোগ সমূহ প্রমাণিত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো: মনোয়ার হোসেন এর স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর শিবচরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের সময় মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম শুধু বিএ বি.এড সনদ প্রদর্শন করেন। বিদ্যালয়টি ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল জাতীয়করণের ঘোষনা হয়। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ ঘোষনার পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গৌর চন্দ্র মন্ডল প্রথম বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন। ওই পরির্দশন প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, বি-এড ও এমএড পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়।
এরপর জাতীয়করণে বিষয় পদ সৃজনের সময় প্রধান শিক্ষক তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, বি-এড, এম এ পাস বলে তথ্য প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে সর্বশেষ নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (পাস), বি.এড, এমএ, এমএড পর্যন্ত তিনি উল্লেখ করেন। এতে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অভিন্ন নামের অন্য একজন শিক্ষার্থীর সনদপত্র জাল করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ঢাকা কলেজ থেকে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০১০ সালে ইংরেজি বিষয়ে এমএ পাসের সনদ জমা দেন তিনি। যার রোল নং ১১৮৩৩, রেজি: নং-৯৩২৯৭৭৩, শিক্ষাবর্ষ: ২০০৯-২০১০।
তদন্ত প্রতিবেদনে সূত্রে আরো জানা যায়, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের আগের কর্মস্থল কাজির পাগলা এ.টি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সরবরাহকৃত শিক্ষক হাজিরা খাতার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানুয়ারী ২০০৬ হতে ডিসেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত নিয়মিত ওই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে। সেই ক্ষেত্রে ছুটি না নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বি.এড ডিগ্রি অর্জন বৈধ ও বিধি সম্মত নয় বলে তদন্ত কমিটি মতামত প্রদান করেছেন।

তদন্ত কমিটি একমত পোষন করেন এবং দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন সনদ জালিয়াতির বিষয়ক আনীত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে। বি.এড প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় থেকে ছুটি গ্রহণের তথ্য কোন বিদ্যালয়ের দলিল দস্তাবেজে পাওয়া যায়নি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাভার টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষের দেয়া ভর্তি রেজিষ্টার অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের মাতার নাম “রহিমা খাতুন”। কিন্ত এসএসসির সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার মাতার নাম লেখা “ফরিদা বেগম” ।
বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর প্রধান শিক্ষকের পদ টিকিয়ে রাখতেই মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য বিভিন্ন সময় তার সুবিধা মতো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রদান করেছেন বলেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মোঃ জহিরুল ইসলাম ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন সনদ জালিয়াতির অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো: মনোয়ার হোসেন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত, প্রাক্তন) জনাব মো.সাখায়াত হোসেন বিশ্বাস।
তদন্ত কমিটি ২০২১ সালের ২২ আগষ্ট বিদ্যালয়ে এসে সরেজমিন তদন্ত করেন। অবশেষে ওই তদন্ত কমিটি গত ২৮ মার্চ ২০২২ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গত ২০২২ সালের ৬ জুলাই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর ওই প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আমার জানা নেই। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা।