লকডাউনের ১ মাস অতিবাহিত: শিবচরে রোগী কমে ১৭ থেকে ৫, চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী কঠোর নজরদারি

বিশেষ রিপোর্টঃ
দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে লকডাউনের একমাস অতিক্রম করল শিবচর। গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শিবচরকে প্রথম কনটেইনমেন্ট পরে লকডাউন করা হয়। শুরুতে প্রবাসী অধ্যুষিত শিবচর উপজেলাটি অধিক ঝূকিপূর্ন ঘোষনা হলেও প্রধানমন্ত্রী ও আইইডিসিআর কতৃক প্রেরিত স্বাস্থ্যবিধি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর সার্বক্ষনিক নজরদারি ও নির্দেশনায় কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় করোনার ভয়াবহতা ও বিস্তার রোধ করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। একইসাথে এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি দরিদ্র পরিবারে খাবার সহায়তা পৌছে যাওয়াসহ নিয়মিত খাবার সহায়তা চলায় মানুষকে ঘরে রাখা সহজ হচ্ছে। কনটেইনমেন্ট ঘোষনার দিন দেশের স্বল্প সংখ্যক রুগীর মধ্যে শিবচরেই আক্রান্ত ছিল ৮ জন। রবিবার সুস্থ হয়ে আইসোলেশন থেকে বাড়ি ফিরেছেন ৮ জন। বর্তমানে মাত্র ৫ জন রোগী আইসোলেশনে রয়েছেন যারা সবাই নারায়নগঞ্জ বা এর সংস্পর্শে আসা। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন নাহলে নারায়নগঞ্জের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইটালীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ৬শ৮৪ জন প্রবাসী শিবচরে আসেন। এদের মধ্যে ৪শ জন হোম কোয়ারেন্টাইন পালন করে। বর্তমানে ৮৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় ৮মার্চ। তার এক দিন আগে ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসেন শিবচর পৌরসভার গুয়াতলার এক ব্যক্তি। তিনি ১৩ মার্চ কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে সনাক্ত হন। পরদিন সনাক্ত হয় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। ১৭ মার্চ সনাক্ত হয় তার শাশুড়ি ও এক বন্ধু। ১৮ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং পরে তিনি পজিটিভ সনাক্ত হন। উল্লেখিত ৭জন ওই প্রবাসীর মাধ্যমেই সংক্রমিত হন। এর বাইরে উপজেলার পাঁচ্চর ইউনিয়নের হোগলার মাঠ গ্রামের একজন আক্রান্ত ছিলেন। ১৯ মার্চ ি উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ দেশের প্রথম কোনো এলাকা হিসেবে শিবচরকে প্রথম কনটেইনমেন্ট পরে লকডাউন ঘোষণা করে। ওই সময় স্বাস্থ্য বিভাগের আইইডিসিআরের টীম শিবচরে অবস্থান নিয়ে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে এবং হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার ব্যবস্থা করে। এর ফলে ওই পরিবারের আরও দুই জনের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ২৪ মার্চ ওই প্রবাসীর বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১১এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের করোনা রোগীর সংখ্যা স্থিতিশীল ছিল । ১২ এপ্রিল ওই প্রবাসীর এক প্রতিবেশী নারীর মধ্যে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলে। এর বাইরে আরো তিন জন আক্রান্ত হন তবে তারা নারায়নগঞ্জ ফেরত । এর মধ্যে একজন চিকিৎসক আছেন যিনি নারায়নগঞ্জে থেকে রোগী দেখতেন। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী চিকিৎসকের স্বামী। তিনি শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক স্ত্রীর কাছে বেড়াতে আসেন এবং তার মাধ্যমে তার চিকিৎসক স্ত্রী ও ৭ বছরের শিশুকন্যা আক্রান্ত হন। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শিবচরের মোট রোগীর সংখ্যা ১৭। এদের মধ্যে আগেই সুস্থ হন ৩ জন। ১৯ এপ্রিল সদর হাসপাতালের আইসোলেশন থেকে ৮জন মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেন (এদের মধ্যে ৫ জন ২য় দফায় আক্রান্ত)। বর্তমানে ৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, শিবচরে করোনার বিস্তার রোধে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আইইডিসিআরের নির্দেশনা মেনে চলতে চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী কঠোর অবস্থান নেন। তার নির্দেশে প্রথমদিনেই আড়াই শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন হয় উপজেলাজুড়ে। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট,সেনাবাহিনী,র‌্যাব। বন্ধ করে দেয়া হয় দোকান পাট,গনপরিবহন। মাত্র ৪ ঘন্টা খোলা থাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান। বন্ধ হয়ে যায় সকল সাপ্তাহিক হাট। তিনি ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসী ও দরিদ্রদের খাবার সহায়তা ঘরে ঘরে পৌছে দেন। আক্রান্ত পরিবারগুলোর খাবার সহায়তায় নজর দেন বিশেষভাবে। মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য নিজ হাতে দেন পিপিইসহ সুরক্ষা সরঞ্জাম। সরেজমিনে পরিদর্শন করেন খাবার সহায়তা কর্মসূচী। ২০ শয্যার পৃথক আইসোলেশন কেন্দ্র ঘোষনা করা হয় বহেরাতলা হাজী কাশেম উকিল মা শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কঠোরভাবে লকডাউন পালন করার কারণে শিবচরে করোনার বিস্তার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। অন্যথায় ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের মত সংক্রমিত এলাকায় পরিণত হত। কারণ শুরুতে ঢাকা পরই শিবচরের করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ডাঃ মোঃ সেলিম বলেন, চীফ হুইপ লিটন চৌধুরীর উদ্যোগে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত কমিটি খাবার সহায়তা ৩০ হাজার পরিবারের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হয়েছে। দলীয় নেতারাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরো ১০ হাজার প্যাকেট খাবার দিয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ লতিফ মোল্লা বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ত্রান তৎপরতা চলছে।
পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, চীফ হুইপের নির্দেশনায় রোজার শুরুতেই আরেকদফা খাবার সহায়তার জন্য তালিকাকরনের কাজ চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ জানান, শিবচরে রবিবার ৮জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৫ জন আইসোলেশনে রয়েছেন। ৮৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, শিবচরে চীফ হুইপ স্যারের নির্দেশনা ও খাবার সহায়তা কার্যক্রম মানুষকে ঘরে রাখতে সহায়তা করেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন খান বলেন, খাবার সহায়তার মধ্যে চাল,ডাল,তেল,চিনি,লবনসহ বিভিন্ন সামগ্রী রয়েছে।
জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মুনির চৌধুরী বলেন, চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী প্রতিটি মুহুর্ত শিবচরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন।তার নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,সেনা বাহিনী ,প্রশাসন, র‌্যাব, জনপ্রতিনিধি,দলীয় নেতৃবৃন্দ,মিডিয়া সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। যতদিন অচলাবস্থা থাকবে ঘরে ঘরে খাবার সহায়তা চলতে থাকবে। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।