লিবিয়ায় ৬ মাস জেল খেটে বাড়ি ফিরলো মাদারীপুরের ২ যুবক

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
সরকারের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ৬ মাস পর লিবিয়ার কারাগার খামচাখামচি জেল থেকে বাড়ি ফিরেছে মাদারীপুরের রাজৈরের মো. রাকিবুল শেখ (২৫) ও মহিদুল (২৬) নামের দুই যুবক। তাদের দেশে ফেরাতে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদের পরিবার। তাদের দাবী দালালদের আইনের আওতায় এনে যেন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। মহিদুল রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের পিরের বাসা এলাকার বাসিন্দা ও রাকিবুল খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ভ্যান চালক কালাম শেখের ছেলে।
শনিবার সকালে ভূক্তভোগিদের বাড়িতে গিয়ে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিজস্ব কোন সম্পত্তি না থাকায় অন্যের জায়গায় বসবাস করে রাকিবুল ও তার পরিবার। সংসারের মেঝো ছেলে তিনি। বাবা, মা, দাদি, বড় বোন ও ছোট ভাইকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে ‘জনপ্রিয় বাগদাদ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি’তে কাজ করতেন। পরে ২০২১ সালের মার্চ মাসে আর্থিকভাবে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার আশায় রাকিবুলকে ধার-দেনা করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাঠায় পরিবারের লোকজন। তাকে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা নেয় রাজৈর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের রহম বেপারীর ছেলে দালাল মেরাজ বেপারী ও তার বড় ভাই মাসুদ বেপারী। এরপর লিবিয়ায় নিয়ে মারধর করে ও বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে রাজৈর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমানের মাধ্যমে আরো ৩ লাখ টাকা নেয় তারা। এর কিছুদিন পরেই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ইউনিয়নের মো. ছাপতি সাহার ছেলে মো. তোতা সাহা নামে আরেক দালাল ফোন করে গেম করানোর জন্য ৬ লাখ টাকা চায়। সেই টাকাও মিজানুর রহমান কাউন্সিলরের কাছে দিতে বলে। পরে টাকা পরিশোধ শেষে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি পাঠানোর সময় লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয় রাকিবুল। এসময় আটক হওয়া সকলকে খামচাখামচি জেলে বন্দী করে। একইভাবে ভোগান্তির শিকার হয় মহিদুল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দুতাবাস চেষ্টা চালিয়ে লিবিয়ার ওই জেল থেকে রাকিবুল ও মহিদুলসহ ১১৪ জনকে উদ্ধার করে দেশে এনে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে সপ্তাহ খানেক আগে বাড়ি পাঠায়। এ ঘটনায় দালালদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। এদিকে সাংবাদিকরা বিভিন্ন দপ্তরে ফোন দেওয়ার পর রাকিবুলের বাবা কালাম জানান, দালালরা কিছু টাকা ফেরত দিয়েছে।
রাকিবুল শেখ বলেন, ‘দালালরা আমাকে নির্যাতন করে অনেক টাকা নেয়েছে। ধরা পড়ার পর দালালরা কোন খোঁজ নেয় নাই। একটা কসাইখানার মধ্যে আমাদেরকে রেখেছিলো পুলিশ। সেখানে সাড়ে ৪ মাস ছিলাম। সারাদিনে একটা খবজা (পেচানো রুটি) খেতে দিতো। পানি চাইলে মারধর করতো। লিবিয়ায় মোট এক বছর ছিলাম। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি দালালদের বিচার চাই।’
রাজৈর থানার ওসি মো. শেখ সাদিক বলেন, ‘এ বিষয়ে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’