রাতে প্রথমে বাবা পরে মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষন, কালকিনির চাঞ্চল্যকর স্বামী স্ত্রী হত্যায় গ্রেফতারকৃত শ্রমিক আশরাফুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

রফিকুল ইসলাম মিন্টু, কালকিনি :

মাদারীপুরে কালকিনিতে আলোচিত স্বামী-স্ত্রী খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত একমাত্র আসামী আশরাফুল মোল্লা (৩৯) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেনের আদালতে জবানবন্দি দেয় আশরাফুল। পরে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে জানায় মেয়েকে ধর্ষন করতেই ওই মেয়ের বাবা ও মাকে সে হত্যা করে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে নড়াইলের সদর উপজেলার শৈলপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন গোপালগঞ্জ জেলার একটি টিম। গ্রেফতার আশরাফুল নড়াইল সদর উপজেলার মধ্যপল্লী এলাকার আকবর মোল্লার ছেলে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গোপালগঞ্জ জেলার এসআই শেখ আল আমিন জানান, গত ২৮ মার্চ জেলার কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের সস্তাল গ্রামের কৃষক মোয়াজ্জেম সরদার কৃষি কাজের জন্য ফরিদপুর থেকে আশরাফুল ও ভোলারাও নামের দুই শ্রমিককে বাড়িতে আনে। ওই বাড়িতে আসার পর আশরাফুলের কুদৃষ্টি পড়ে কৃষকের মেয়ের দিকে। প্রায় সময়ই আশরাফুল মোয়াজ্জেমের মেয়ের সাথে গল্প করার চেষ্টা করতো। বিষয়টি মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগমের নজরে এলে তারা আশরাফুলকে সাবধান করেন। এতে আশরাফুল ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে । গত ৫ এপ্রিল রাতে আশরাফুল প্রথমে মোয়াজ্জেমকে বাড়ির নিকটবর্ত্তী নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে গামছা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে । পরে তার স্ত্রী মাকসুদাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে একইভাবে শ^াসরোধ করে হত্যা করে লাশ দুটির হাত-পা বেঁধে পাশের একটি খালে ফেলে রাখে আশরাফুল। পরে বাড়িতে গিয়ে মোয়াজ্জেমের মেয়েকে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষন করে ভোর হওয়ার আগেই পালিয়ে যায়। পরদিন মোয়াজ্জেম ও মাকসুদাকে না দেখে পরিবারের লোকজন নিখোঁজ দাবী করে কালকিনি থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। নিখোঁজের ৪ দিন পর গত ৯ এপ্রিল বাড়ির পাশর্^বর্ত্তী রাজারচরের শুকিয়ে যাওয়া একটি খালের ভেতর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করে। পরে মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় পিবিআইকে। তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় ঘটনার ১৩দিন পর ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নড়াইল থেকে এই ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী আশরাফুলকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ সময় তার নিকট থেকে নিহত স্বামী-স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে।

পিবিআই জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোষাক ব্যবহার করে ও সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দাবী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অপরাধ করেছে আশরাফুল। তার বিরুদ্ধে যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। কালকিনির স্বামী স্ত্রীকে শুধু মাত্র তাদের মেয়েকে ধর্ষন করার জন্য হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনা অনেক আগেই করেছিল গ্রেফতারকৃত আশরাফুল। স্বামী-স্ত্রীকে হত্যার পরে রাতে তাদের মেয়ের সাথে জোরপূর্বক একাধিকবার শারিরিক সম্পর্ক করে আশরাফুল। পরে ভোরে পালিয়ে যায়। হত্যাকান্ডের ঘটনায় শুধুমাত্র আশরাফুল একাই জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।