মাদারীপুরে ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধর করোনা জয়

মাদারীপুর প্রতিনিধি :
৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ গোলাম মো. আলী খন্দকার। হাপানী, হৃদরোগসহ জটিল কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন তিনি। এ সবের মধ্যে হানা দেয় করোনা। জ¦র, ঠান্ডাকাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয় মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে। টানা ১৫দিন চিকিৎসা শেষে তিনিও করেছেন করোনাজয়। ফিরে গেছেন ছেলের ঘরে।
সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজৈর উপজেলার লুন্দি এলাকায় করোনাআক্রান্ত এক ইমামের সংস্পর্শে এসে কোভিট-১৯ এ আক্রান্ত হন গোলাম মো. আলী খন্দকার। গত ১৪ মে তাকে গুরতর অবস্থায় ভর্তি করা হয় মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। সিভিল সার্জনের নির্দেশনায় বৃদ্ধ এই মানুষটিকে সুস্থ করতে গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। টানা ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে শুক্রবার বিকেলে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁকে ছাড়পত্র দেয় মাদারীপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গোলাম মো. আলী খন্দকার ছিলেন মৎস বিভাগের একজন কর্মচারী। তার ৫ ছেলে ও এক মেয়ে। ৫ ছেলে মধ্যে ৪ জনই প্রতিষ্ঠিত। করেন সরকারি চাকরি। তাই বাবাকে রেখে গেছেন ছোট ছেলে আসাদুজ্জানের কাছে। চাকরি জীবনে অবসরে আসার পরে গোলাম মো. আলী খন্দকার গ্রামের বাড়ির নাতি-পুতিদের সাথে কাটাতের তাঁর সময়।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন গোলাম মো. আলী খন্দকার। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন শরীরের অবস্থা ভাল না। লাঠি ভর দিয়ে হাটতে হয়। হুটুর ব্যথায় নিচে বসতে পারি না। অনেক কষ্টে তবুও নাতি-পুতিদের নিয়ে চলছিল জীবন। করোনা হওয়ার পরে শরীর আরো ভেঙ্গে পড়ে, বেঁচে থাকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছি আর বেঁচে ফিরতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহ্ রহমত ও চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমি সুস্থ হয়ে আবার ছেলের বাড়ি ফিরে গেছি। এই বয়সে এর থেকে আর বড় সুখ হতে পারে না।’
বৃদ্ধ বাবাকে সুস্থ শরীরে ফিরে পাওয়ায় খুশি হয়েছেন আসাদুজ্জান ও তার স্ত্রী সুমি। আসাদুজ্জান বলেন, ‘চিকিৎসকরা আমার বাবার শুধু করোনার চিকিৎসা করেনি, তারা বাবার হাপানী, হাটুর ব্যথা ও মাজায় ফোঁড়াও চিকিৎসাও করেছে। আবার বাবা আগের থেকে অনেক সুস্থ। বাবাকে ফিরে পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো।’
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চারিদিকে দুঃখ-কষ্টের মাঝে আনন্দের সংবাদও আছে। করোনা থেকে বৃদ্ধ গোলাম মো. আলী খন্দকারকে সুস্থ করতে পেরে আমরাও আনন্দিত। তিনি করোনা টিমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, সেবিকাসহ চতুর্থ শ্রেণির সব কর্মচারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।’
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, রবিবার নতুন করে আরও ২৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে রাজৈর উপজেলার ১৫ জন, কালকিনি উপজেলার ৪ জন, সদর উপজেলার ২ জন ও শিবচর উপজেলার ২ জন রয়েছে। এনিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১শ ২৩জনে দাঁড়ালো। গত ২৪ ঘন্টায় ৫ জনসহ জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ৬৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৩ জন, নতুন শনাক্ত ২৩ জনকে আইসোলেশনে আনার প্রস্তুতি চলছে।